বিদ্যায়াঃ আলয় = বিদ্যালয়ঃ
মহান জন্য = মহা
উপরের প্রথম উদাহরণে বিদ্যায়াঃ" একটি পদ এবং 'আলয়ঃ' আরেকটি ভিন্ন পদ। এ দুটো পদ মিলিত হয়ে
"বিদ্যালয়ঃ' পদটি গঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় উদাহরণে 'মহান' একটি পদ এবং 'জনঃ' আরেকটি পৃথক পদ। এ
দুটো পদের মিলনে গঠিত হয়েছে 'মহাজনঃ' পদ।
এরূপভাবে পরস্পর সম্বন্ধবিশিষ্ট দুই বা বহুপদের একপদে মিলনকে সমাস বলে।
সমাস শব্দের অর্থ একত্রীকরণ বা সংক্ষেপ।
সমাসের প্রয়োজনীয়তা: শব্দগঠন, বাক্যের শ্রুতিমধুরতা সাধন ও বাক্যকে সংক্ষিপ্তকরণ
সমাসের প্রধান প্রয়োজন।
এই তিনটি
সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য : সন্ধিতে বর্ণে বর্ণে মিলন হয়, আর সমাসে মিলন হয় দুই বা বহুপদের।
ব্যাসবাক্য 'ব্যাস' শব্দটির অর্থ বিভক্ত হয়ে অবস্থান। সুতরাং যে-বাক্যের সাহায্যে সমাসের অন্তর্গত
পদগুলোকে বিভাগ অর্থাৎ পৃথক করা হয়, তার নাম ব্যাসবাক্য। ব্যাসবাক্যের অন্য নাম সমাসবাক্য ও
বিগ্রহবাক্য। যেমন- নদী মাতা যস্য সঃ নদীমাতৃকঃ।
সমস্যমান পদ : যে সকল পদের মিলনে সমাস গঠিত হয়, তাদের প্রত্যেককে সমস্যমান পদ বলা হয়।
যেমন- নবম অনুম্ = নবান্নম। এখানে 'নবম্' ও 'অনুম' দুটো সমস্যমান পদ ।
সমস্তপদ : সমাসবদ্ধ পদকে বলা হয় সমস্তপদ জায়া চ পতিশ্চ = দম্পতী, এখানে 'দম্পতী' একটি
সমস্তপদ।
সমাসের শ্রেণীভেদ : সমাস প্রধানত চার প্রকার- অব্যয়ীভাব, তৎপুরুষ, দ্বন্দ্ব ও বহুব্রীহি। কর্মধারয় ও বিপু
সমাস তৎপুরুষ সমাসেরই অন্তর্গত। কারো কারো মতে সমাস ছয় প্রকার দ্বন্দু, দ্বিগু, অব্যয়ীভাব, তৎপুরুষ,
কর্মধারয় ও বহুব্রীহি। আমরাও সমাস ছয় প্রকার বলছি।
১। অব্যয়ীভাব সমাস
অব্যয় শব্দ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং অব্যয়ের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস
বলা হয়।
অব্যয়ীভাব সমাসে শেষের পদটি থাকে বিশেষ্য এবং অব্যয় ও ক্লীবলিঙ্গ হয়।
সামীপ্য, সাদৃশ্য, অভাব, পশ্চাৎ, যোগ্যতা, বীপ্সা, অনতিক্রম প্রভৃতি অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়।
সামীপ্য :
কূলস্য সমীপম
= উপকূলম্
গৃহসা সমীপ
= উপগৃহম
=
সাদৃশ্য :
দ্বীপস্য সদৃশম
= উপদ্বীপ
হরেঃ সদৃশম্
=
সহরি
অভাব :
ভিক্ষায়াঃ অভাবঃ
= দুর্ভিক্ষম্
মক্ষিকাণাম্ অভাবঃ
: নির্মক্ষিক
=
পশ্চাৎ:
পদস্য পশ্চাৎ
= অনুপদমূ
রথস্য পশ্চাৎ
= অনুরথম
যোগ্যতা:
রূপস্য যোগাম্
= অনুরূপ
দিন দিন
= প্রতিদনম্
গৃহং গৃহম
= প্রতিগৃহম্
অনতিক্রম:
বিধি অনতিক্রম্য
= যথাবিধি
শক্তিম অনতিক্রম্যা
= যথাশক্তি
২। তৎপুরুষ সমাস
যে-সমাসের পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি (দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী বিভক্তি লোপ পায় এবং
পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
বিভক্তির লোপ অনুসারে তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার- দ্বিতীয়া তৎপুরুষ, তৃতীয়া তৎপুরুষ, চতুর্থী তৎপুরুষ,
পঞ্চমী তৎপুরুষ, ষষ্ঠী তৎপুরুষ ও সপ্তমী তৎপুরুষ।
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি লোপ পায়। যেমন—
গৃহং গতঃ =
গৃহগতঃ
শরণম্ আপনঃ = শরণাপন্নঃ
তৃতীয়া তৎপুরুষ :
পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি লোপ পায়। যেমন—
কীটেন নষ্টঃ = কীটদষ্টঃ
পদেন দলিতঃ = পদদলিতঃ
চতুর্থী তৎপুরুষ :
পূর্বপদের চতুর্থী বিভক্তি লোপ পায়। যেমন-
দেবায় দত্তঃ = দেবদত্তঃ
পুত্রায় হিতম্ = পুত্রহিতম
পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি লোপ পায়। যেমন—
পঞ্চমী তৎপুরুষ :
বৃক্ষাৎ পতিতঃ = বৃক্ষপতিতঃ
শাপাৎ মুক্তঃ = শাপমুক্তঃ
ষষ্ঠী তৎপুরুষ :
পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি লোপ পায়। যেমন---
রাজঃ পুত্রঃ = রাজপুত্রঃ
কাল্যাঃ দাসঃ = কালিদাসঃ
সপ্তমী তৎপুরুষ :
পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি লোপ পায়। যেমন—
রণে নিপুণঃ = রণনিপুণঃ
তর্কে পণ্ডিতঃ = তর্কপণ্ডিতঃ
৩। কর্মধারয় সমাস
যে সমাসে সাধারণত পূর্বপদ বিশেষণ, পরপদ বিশেষ্য ও সমস্ত পদটি বিশেষ্য হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস
বলা হয়।
কর্মধারয় সমাস যেহেতু তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণীভেদ, সেহেতু তৎপুরুষ সমাসের মত এই সমাসের পরপদের
অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়।
ব্যাসবাক্যসহ কয়েকটি কর্মধারয় সমাস :
নীলম উৎপল
রক্তং কমলম
= নীলোৎপলম্
= রক্তকমল
নবম্ অনুম্
মহান বীরঃ
= নবান্নম্
= মহাবীরঃ
মহান রাজা
= মহারাজঃ
প্রিয়ঃ সখা
= প্রিয়সখঃ
নব গ্ৰহাণ
= নবগ্রহাঃ
সুন্দরং গৃহম্
= সুন্দরগৃহম্
যে-সমাসে পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকে এবং সমাহার অর্থ প্রকাশ করে, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। দ্বিপু
সমাসবদ্ধ পদ সাধারণত ক্লীবলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ হয়। যেমন—
ক্লীবলিঙ্গ
ত্রয়াণাং ভুবনানাং সমাহারঃ
= ত্রিভুবনম্
চতুর্ণাং যুগানাং সমাহারঃ
= চতুর্যুগ
পঞ্চানাং গৰাং সমাহারঃ
= পঞ্চগম্
ি
ত্রয়াণাং লোকানাং সমাহারঃ
= ত্রিলোকী
পঞ্চানাং বটানাং সমাহারঃ
= পঞ্চবটী
সন্তানাং শতানাং সমাহারঃ
= সপ্তশতী
৫। সমাস
যে-সমাসে সমস্যমান পদের প্রত্যেকটির অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় এবং ব্যাসবাক্যে প্রত্যেক সমস্যমান
পদের পরে 'চ'
এই অব্যয় যুক্ত হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন-
রামশ্চ লক্ষ্মণশ্চ
ভীমশ্চ অর্জুনশ্চ
= রামলক্ষ্মণৌ
= ভীমার্জুনৌ
কর্ণশ্চ অর্জুনশ্চ
=
কর্ণার্জুনৌ
দেবাশ্চ অসুরাশ্চ
= দেবাসুরাঃ
মাতা চ পিতা চ
= মাতাপিতরৌ
জায়া চ পশ্চি
= দম্পতী
ইন্দুশ্চ বরুণ
= ইন্দ্রাবরুণী
=
মিশ্চ বরুণশ্চ
= মিত্ৰাবৰূপৌ
কৃষ্ণণ্ড অৰ্জ্জুনশ্চ
= কৃষ্ণার্জুনৌ
৬। বহুব্রীহি সমাস
যে-সমাসে সমস্যমান পদের কোনটির অর্থ প্রধানরূপে না বুঝিয়ে অন্য পদের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়,
তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। এই সমাসের ব্যাসবাক্যে পুংলিঙ্গে 'যস্য' ও স্ত্রীলিঙ্গে 'যস্যাঃ' পদ ব্যবহৃত হয়।
যেমন-
নদী মাতা যস্য সঃ
= নদীমাতৃকঃ
=
পীতম্ অম্বরং যস্য সং
= পীতাম্বরঃ
শোভনং হৃদয়ং যস্য
= সুহৃৎ
মহান্তৌ বাহু যস্য সঃ
= মহাবাহুঃ
মহান্তৌ ভুজৌ যস্য সঃ
= মহাভুজঃ
মহতী মতিঃ যস্য সঃ
= মহামতিঃ
যুবতিঃ জায়া যস্য স
= যুবজানিঃ
সীতা জায়া যস্য সঃ
= সীতাজানিঃ
বীণা পাদৌ যস্যাঃ সা
= বীণাপাণিঃ
মৃতঃ ধবঃ যস্যাঃ সা
= বিধবা
প্রশ্নমালা
শুদ্ধ উত্তরটির পাশে টিক (/) চিহ্ন দাও :
(ক) গৃহস্য সমীপম্ = প্রতিগৃহ/উপগৃহম/পরিগৃহম/সগৃহম্।
(খ) ত্রয়াণাং লোকানাং সমাহারঃ = ত্রিলোকী/ত্রিলোকম/ত্রিলোকি /ত্রিলোকঃ ।
(গ) তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের মধ্যপদের উভয়পদের পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে।
(খ) সমাহার অর্থ প্রকাশ করে দ্বিগু/দ্বন্দ্ব/তৎপুরুষ/অব্যবীয়ভাব সামস।
একপদে প্রকাশ কর :
(ক) বিধিম্ অনতিক্রম্য। (খ) রণে নিপুণঃ। (গ) সন্তানাং শতানাং সমাহারঃ। (ঘ) নদী মাতা
যস্য সঃ। (৬) ত্রয়াণাং লোকানাং সমাহারঃ। (চ) ভিক্ষায়া অভাবঃ ।
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
(ক) সমাস শব্দের অর্থ কি?
(খ) সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য কি?
(গ) সমাসের প্রয়োজনীয়তা কি?
(ঘ) অব্যয়ীভাব সমাসবদ্ধ পদ কোন লিঙ্গ হয়?
(ঙ) বহুব্রীহি সমাসে কোন পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে?
81
বাংলায় অনুবাদ কর
(ক) তে বিদ্যালয়ং গচ্ছস্তি। (খ) অর্জুনঃ রণনিপুণ আসীৎ। (গ) বাংলাদেশো নদীমাতৃকঃ। (ঘ) সা
নীলোৎপলং চিনোতি। (ঙ) কালিদাসঃ মহাকবিঃ ।
সংস্কৃতে অনুবাদ কর :
বৃক্ষ থেকে পতিত হয়েছে। (খ) য্যাতি শাপ থেকে মুক্ত হয়েছেন। (গ) সে আমার
প্রিয় বন্ধু। (ঘ) বালিকারা লালপদ্ম চয়ন করছে। (ঙ) এটি পঞ্চবটী।
সমাস ও ব্যাসবাক্য লেখ :
দম্পতী, উপকূলম, কালিদাসঃ, নবান্নম,
পঞ্চবটী।
१
বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? এই সমাসের ব্যাসবাক্যে সাধারণত কি থাকে? উদাহরণ দাও।
তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? বিভক্তির লোপ অনুসারে তৎপুরুষ সমাস কল্প প্রকার ও কি কি? প্রত্যেক
প্রকারের উদাহরণ দাও ।
অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে? কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে অব্যয়ীভাব সমাস হয়। প্রতিক্ষেত্রে উদাহরণ দাও।
ব্যাসবাক্য, সমস্তপদ ও সমস্যমান পদের পার্থক্য বুঝিয়ে লেখ ।
১০ ।
১১।
সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও।
আরও দেখুন...